মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে চলছে চোর পুলিশ খেলা। অভিযানের পরপরই দোকানপাটে ফিরছে আগের জনবহুল দৃশ্য। অথচ করোনা দ্রুত সংক্রমনের দিক দিয়ে বরিশাল জেলার রেড জোন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আগৈলঝাড়া উপজেলাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএএফপিও) ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, রবিবার তিনি হাসপাতালে তার চেম্বারে জ¦র, কাশি উপসর্গ নিয়ে আসা ১০জন রোগী দেখেছেন। তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বলা হলে ওই দিনই তাদের নমুনা পরীক্ষা করে ৮জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। রবিবার উপজেলায় মোট করোনা সনাক্ত হয়েছে ১৭জন। বিষয়টি অত্যান্ত উদ্বেগজনক হিসেবে তিনি উল্লেখ করে সরকারের কঠিন লকডাউন বাস্তবায়নে আইন শৃংখলা বাহিনী বিশেষ করে এলাকায় র্যাব ও সেনা বাহিনীর উপস্থিতি দরকার বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জ¦র, সর্দি, কাশীতে ভোগা রোগীদের পরীক্ষা করতে বলা হলেই তাদের ৭০থেকে ৮০শতাংশ লোকের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জীবন বাজানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি সর্বাত্মক কঠিন লকডাউন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
লকডাউন বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান করলেও অভিযান স্থান ত্যাগ করা মাত্রই পুণরায় দোকানপাট খুলে বসছে ব্যবসায়িরা। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অকারণে রাস্তায় লোকজন ঘোরাফেরা করলেও দেখার যেন কেউ নেই?
সোমবার লকডাউনের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের লকডাউন কার্যকর করতে আগৈলঝাড়ায় দেখা মেলেনি র্যাব, বিজিবি বা সেনাবাহিনীর সদস্যদের। ইতোমধ্যেই থানা পুলিশের দুই সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় লকডাউন কার্যকর করতে থানা পুলিশেরও কোন সদস্যকে বাইরে কাজ করতে দেখা য়ায়নি।
থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, কঠিন লকডাইন বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া যদি থানার সাথে সমন্বয় করা হতো তবে পুলিশ লকডাউন বাস্তবায়নে আরও কঠোর ভুমিকা রাখতে সক্ষম হতো।
সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন, একজন ম্যাজিষ্ট্রেট (ইউএনও)র পক্ষে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সর্বত্র লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।
সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ি সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নির্র্দ্দিষ্ট কিছু দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও মফস্বলের চায়ের দোকানগুলো খুলে বসছে সকাল ছয়টার মধ্যেই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইউএনও’র অভিযানের ভয়ে কোথাও কোথাও দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়ে আবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খুলে বসছে চায়ের দোকান।
উপজেলা সদরসহ সকল হাট বাজারের চা’য়ের দোকানগুলো ঝাপ বন্ধ করে একমাত্র দরজা খোলা রেখে দোকানের মধ্যে লোক বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মধ্যরাত পর্যন্ত লোকজন গাদাগাদি করে বসিয়ে বিক্রি করছে চা-পান, সিগারেট। পচনশীন দোকান হিসেবে নিজেদের দাবি করে উপজেলা সদরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখছে ফলের দোকান।
স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারী নির্দেশনা অম্যান করে সপ্তাহের হাটবার হিসেবে শনিবার (৩জুন) বসেছিল বাশাইল হাট। শনিবারের হাটে লোক সমাগম ছিল অন্যান্য হাটবারের মতোই। শুক্রবার (২জুন) বিকেলে রাজিহারও বসেছিল সাপ্তাহিক হাট। এসব হাট দেখে বোঝার উপায় নেই যে দেশে কোন লকডাউন চলছে। হাটগুলোতে স্বাস্থবিধি মানার কোন বালাই দেখা যায় নি। হাটে আগত বেশীরভাগ লোকের মুখে ছিল না মাক্স। চায়ের দোকান, সকালের নাস্তার দোকান, হোটেল, মিস্টির দোকান এমনকি সেলুন পর্যন্ত রয়েছে খোলা।
ভ্রাম্যমান আদালত এক এলাকায় অভিযানে নামলে অন্য এলাকায় দেখা যায় দোকানপাট খোলার আগের চেহারা। উপজেলা সদরের ব্যবসায়িরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার ব্যাপারে কিছুটা নিয়মনীতির মধ্যে থাকলেও উপজেলার গ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারের লোক সমাগম ঘটছে আগের মতোই।
গ্রাম পর্যায়ে জায়গা থাকা সত্বেও কোথাও উন্মুক্ত স্থানে মাছ কিংবা কাঁচা বাজার স্থানান্তর করা হয়নি। কারন হিসেবে জানা গেছে, অধিকায়শ বাজারেই নেই পরিচালনা কমিটি। দু-এক জায়গায় যাও আছে তাও কাগজে কলমে দখলে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যার কারনে সরকারের লকডাউন বাস্তবায় হচ্ছে না ওই সকল হাট বাজারে।
এলাকার জনপ্রদিধিধিরাও তাদের স্ব-স্ব এলাকায় কঠিন লকডাউন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখছেন না। স্থানীয় হাট-বাজারগুলো তারা তদারকি করলে অন্তত জনসমাগম কিছুটা হলেও এড়ানো যেত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবুল হাশেম লকডাউনে নিজেকে বরিশাল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সময় মাঠে অভিযানে কাজ করার দাবি করে বলেন- এক জায়গায় অভিযান শেষে অন্য জায়গায় চলে গেলেই পুর্বের স্থানে লোকজন জরো হতে চায়। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য বলা হলেও মানুষ সচেতনতার দিকে না গিয়ে অকারণে হাট বাজারে গিয়ে নিজেকে ও পুরো পরিবারকে করোনা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এলাকা তদারকির জন্য তিনি র্যাব ও সেনাবাহিনীর উপস্থিত জরুরী উল্লেখ করে আরও বলেন- বরিশাল শেখ হাসিনা সেনানিবাস থেকে তার কাছে উপজেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসার কথা বলা হলেও সোমবার পর্যন্ত সোনাবাহিনীর কোন দল আগৈলঝাড়ায় আসেনি বলে জানান ইউএনও মো. আবুল হাশেম।